বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় অবশেষে চীনের সহায়তায় বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে তিস্তা মহাপরিকল্পনা। এটি বাস্তবায়নের জন্য গত দুই বছর ধরে মাঠ পর্যায়ে সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে প্রকল্প প্রায় চূড়ান্ত করেছে চীনের প্রতিষ্ঠান চায়না পাওয়ার ও চায়না রিভার ইয়েলো। সার্বিক পরিকল্পনাসহ ড্রইং ডিজাইনও সম্পন্ন হয়েছে। পানিসম্পদ ও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া গেছে সবুজ সঙ্কেত। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা, যা বাস্তবায়ন হবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে। সরকার যেমন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আগ্রহী, তেমনি চীন সরকারও এগিয়ে এসেছে অর্থায়নে। ইতোমধ্যে অর্থের যোগান দিতেও আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হয়েছে। মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদীর ডান-বাম উভয় তীর ঘেঁষে ২২০ কিলোমিটার উঁচু গাইড বাঁধ, রিভার ড্রাইভ, হোটেল-মোটেল-রেস্তরাঁ, পর্যটন কেন্দ্র, ১৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুতকেন্দ্র, শিল্প-কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার, বনায়ন ইত্যাদি রয়েছে। এতে তিস্তার মূলপ্রবাহ থাকবে দুই কিলোমিটার, যা নাব্য থাকবে সারা বছর এবং কয়েকটি ক্যানেল দ্বারা সংযুক্ত। একদা প্রমত্তা ও খরস্রোতা তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বাংলাদেশ অংশে কমছে দিন দিন। নদীর উজানে পানির প্রবাহ কমতে থাকায় এবং ভাটি এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধু ধু বালুচর পড়ায় বর্তমানে একটি সরু নালার আকার ধারণ করেছে কল্লোলিনী তিস্তা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের খবর অনুযায়ী, ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ আগে ছিল ৪ হাজার কিউসেক। বর্তমানে সেটি কমে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১২শ’ কিউসেকে। বর্তমানে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার যে মুমূর্ষু অবস্থা তাতে একে ‘মৃৎবত’ নদী ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। সে অবস্থায় তিস্তা নদী রক্ষার লক্ষ্যে এবং সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভারতকে ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ পানি ছাড়তে দিল্লীকে দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ঢাকা। সত্যি বলতে কি, তিস্তা চুক্তি এখন বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নন। তদুপরি বর্তমানে বিধানসভা নির্বাচনকে ঘিরে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে তার চূড়ান্ত খারাপ সময় যাচ্ছে। অবশ্য তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে মমতাকে রাজি করানোর দায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের, বাংলাদেশের নয়। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটিই এখন দেখার বিষয়। ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে সে দেশের আদৌ কোন সাড়া মেলে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়।
Leave a Reply